ব্যাক্তিগত

19 March 2018

স্বপ্নবিলাসী নারী, উচ্চাভিলাষী পুরুষ, বিধ্বস্ত সমাজ...

নিন্ম-মধ্য আয়ের এই দেশে প্রায় প্রতিটি পরিবারই (গুটি কয়েক উচ্চ বিত্ত পরিবারের কথা ব্যতিক্রম ধরে) কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে এগিয়ে চলে এখানে যেমন অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা আছে, তেমন আছে সামাজিক সীমাবদ্ধতা পরিবার সমাজের দায়িত্ব যেখানে নির্বিঘ্নে এগিয়ে চলার পথ তৈরি করে দেয়া, সেখানে উল্টো সীমারেখা টেনে দেয়। সেই সাথে কখনও কখনও যোগ হয় ধর্মের নামে আরও কিছু - গোড়ামী এখানেই শেষ হয় না বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষিতদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা যে সমাজে আমরা বাস করি তার বিশ্বাস নৈতিকতা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে, যা সীমাবদ্ধতার আরও একটি মাত্রা তৈরি করে নারী পুরুষের (ছেলে-মেয়ে) সকলের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একই রকম হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় যা এই লেখার প্রতিপাদ্য

আমাদের সমাজে একটি মেয়ে জন্মের পর থেকেই (মতান্তরে কৈশোর থেকে) একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে বেড়ে উঠে বাস্তবিক অর্থে আমাদের সমাজ কখনও নারী স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারেনি প্রতিটি মেয়েই তাই বুদ্ধি-বিবেকের বিকাশের (কৈশোর থেকেই) পর থেকেই অপূর্ন ইচ্ছাগুলো ভবিষ্যতে পূরণের স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হয় তার সকল স্বপ্ন পূরণের মূল ভরসা হয় তার ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গী, তথা স্বামী আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্য অভিবাকরাও (পিতা-মাতা) একইভাবে চিন্তা করে, আশা করে একটি ভালো ছেলের সাথে তাদের মেয়ের বিয়ে দিবে। এবং সে তাদের মেয়েকে সুখী করার (তথা স্বপ্ন পুরণের) যাবতীয় দায়িত্ব নিয়ে সাধ্যমত পূরণ করবে। সেই কল্পিত ভালো ছেলের গ্রহণযোগ্যতা তৈরির আশায় তারা তাদের মেয়েকে সকল প্রকার সমালোচনা মুক্ত রাখতে সর্বাত্তক চেষ্টা করেন প্রকারন্তরে সীমাবদ্ধতা আরও বৃুদ্ধি পায়, পরাধীনতার শৃংখলটি আরও মজবুত হয়। এভাবেই একটি মেয়ের এক/দেড় যুগ কাটে ইচ্ছা এবং চাওয়াগুলকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখার যুদ্ধে। আর একটি দিনের আশায়, যেদিন তার স্বপ্ন গুলো ডানা মেলে উড়তে শুরু করবে। এই সময়ের মধ্যেই সে জেনে যায় এই শৃঙ্খল থেকে মুক্তির সৌভাগ্য সবার হয় না। এবং অপেক্ষা শেষের সন্ধিক্ষণে এসে সে জানতে পারে তার স্বাপ্নের যোগবিয়োগ অত্যাবশ্যকীয়, এবং বেশিরভাগই অনিশ্চিৎ চিন্তায় মননে পরনির্ভর্শীলতায় তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ গোছানোর কাজে অসচেতন হয়ে পড়ে এবং একসময় হঠাৎ আবিষ্কার করে নিজের পায়ে দাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় রসদ সে সংগ্রহ করতে ভূলে গেছে  এই অনিশ্চিৎ পরিস্থিতি মানসিক চাপে পরিণত হয়, কখনও কখনও হতাশায়/হীনমন্যতায় রুপান্তরিত হয়।

ছেলেদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু ভিন্নরকম ছেলেরা ছোট থেকেই তুলনামূলক বেশী স্বাধীনতা ভোগ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের সীমারেখা নির্ধারিত হয় পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি দ্বারা যা কর্মজীবনে প্রবেশ করার মাধ্যমে পুনর্ঘটিত হয় বেড়ে উঠার সময়টাতে সে জানতে পারে তার ইচ্ছাপূরণের সর্বোত্তম উপায় হল নিজের পায়ে দাড়ানো এবং সেই আশায় ভবিষ্যতের জন্য জমা রাখা এছাড়াও, ভবিষ্যতের কাণ্ডারি হিসেবে তাকে প্রস্তুতি নিতে হবে যার লক্ষ পরিবার সমাজ উভয় দিক থেকে বর্তমাকে ছাড়িয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন সেখানে শুধু নিজের গুলোই না, তার উপর নির্ভরশীল আরও অনেকের ইচ্ছাপূরনের দায়িত্বও তার সর্বসাকুল্ল্যে নিজের ইচ্ছা পূরণ, ভবিষ্যতের দায়গ্রহন এবং পুর্ব প্রজন্মকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ নিয়ে সম্ভাব্য সব অর্জনের জন্য একসময় পথচলা শুরু করে। এই প্রস্তুতির নানা পর্যায়ে তার অগ্রগতি পরিমাপ করে তার ব্যর্থতার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয় যার পুরটা দায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাকে নিতে হয়। এভাবে একটি ছেলে তার বেড়ে ওঠার সময়টাতে ভবিষ্যতের যে ছবি আকে তা দীর্ঘ পথের পরিক্রমায় বাস্তবতার দহনে অনেকটাই নতুন চেহারা পায়, স্বপ্ন থেকে আকাঙ্ক্ষায় রুপ নেয়, যার সিমানা হয় তার কল্পনার সর্বোচ্চ সীমা, কখনও কখনও কল্পনাকেও ছাড়িয়ে

সময়ের পথ পরিক্রমায় জীবনকে উপভোগ করার সন্ধিক্ষনে উপস্থিত হয়ে তাদের পরিচয় ঘটে কঠোর বাস্তবতার সাথে যেখানে তাদের আশা পূরণ অনেকটাই দঃস্বাধ্য। ভাবনা বাস্তবতার সাথে বিস্তর পার্থক্য আবিস্কার করে, যার প্রথমটি শুরু হয় কর্মজীবনে প্রবেশের সময় নিজেকে গুছানের জন্য যে সুযোগ একটি ছেলের প্রয়োজন সমাজ তা দিতে ব্যর্থ আর যে যোগ্যতা সে অর্জন করেছে তা অপ্রতুল প্রতিপন্ন হয়, কখনও প্রয়োজনের বিচারে কখনও তুলনামূলক বিচারে। এবং অবস্থা শুধু তার একার জন্যই না, তার মত আরও অনেকের কিন্তু এখানে তারা সহযোদ্ধা নয় প্রতিদ্বন্দী। কেননা তাদেরর এগিয়ে যাওয়ার বাসনা পূরণ করার জন্য যে পথের প্রয়োজন তা সমাজ তৈরি করতে ব্যর্থ। যেটুকু সুযোগ সমাজ তৈরি করতে পেরেছে তাতে হয়ত অল্পকয়েকজনের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব ফলাফল যুদ্ধ। যুদ্ধে অবস্থান সংহত হতে না হতেই ছেলেদের নিতে হয় নতুন দায়িত্ব। যদিও পরিবার ভাবে সহযোদ্ধা ব্যবস্থা হিসেবে, ছেলেদের জন্য হয়ে ওঠে আরেকটি স্বপ্ন পূরনের দায়িত্ব। নিজেকে নিয়ে খাবি খেতে থাকা একটি ছেলে পায় ব্যর্থতার আরেকটি অনুভূতি আর মেয়ে পায় স্বপ্ন ভঙ্গের এভাবেই ব্যর্থতা আর স্বপ্ন ভঙ্গের অনুভুতি নিয়ে তারা আরও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। ব্যাক্তি থেকে পরিবার হয়ে তা সমাজে প্রভাব ফেলতে শুরু করে যা সময়ের পরিক্রমায় সমাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে দেখা দেয়।

এতকিছুর মধ্যেও আমরা প্রত্যেকে সুন্দর আগামীর জন্য পথ চলতে থাকি কেননা আমরা বিশ্বাস করি সংসার সাগর সুখ-দু:খের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা

0 comments: