ব্যাক্তিগত

23 February 2024

একটি শব্দ, বিস্তারিত জানার ইচ্ছা ও উপলব্ধি...

পুর্ব কথা: খুব লিখতে ইচ্ছা করছিল তাই লিখে ফেললাম।

শুরুর কথা (উপলক্ষ): কিছুদিন আগে বন্ধুদের সভায় আলোচনা করে ভোটের মাধ্যমে চুড়ান্ত হ‌ওয়ার পর আমার মনে হল সবাই মিলে একটা ভূল সিদ্ধান্ত নিলাম! সভা পরবর্তী একান্ত আলোচনায় এক বন্ধুকে বিষয়টা বিস্তারিত বলে দু:খ প্রকাশ করলাম।

যদিও বিশ্বাস ছিল এ নিয়ে কোন ঝামেলা হবে না, কিন্তু হল। কারন বন্ধু আমার অনুরোধ না রেখে সময় ফুরাবার আগেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য virtual group এ পুন:বিবেচনার কথা তুলল। অনেকেই পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করল কিন্তু আমি দলীয় সিদ্ধান্তের সম্মানে জন সণ্মুখে নিরব র‌ইলাম। ফলাফল হিসাবে জুটল বন্ধুর ভর্ৎসনা যার মধ্যে একটা শব্দ ছিল hypocrisy. শব্দটার ব্যবহারিক অর্থ আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য হ‌ওয়ায় আমি কারন জানতে চাইলে যথাযথ ব্যখ্যা না দিয়ে আর‌ও অনেকভাবে তিরস্কার করল।

সেই থেকে শব্দটা আমার মাথায় জেকে বসল। আমার জানা মতে ‘বিশ্বাস আর কথা/কাজের অমিল হল hypocrisy’. আমার জানার বাইরেও কিছু থাকতে পারে ভেবে একদিন অভিধান নিয়ে বসার সিদ্ধান্ত নিলাম।

এর মধ্যে খেয়াল করলাম কেউ কেউ বিভিন্ন ঘটনায় বিভিন্ন মতাদর্শের আচরন করে। যেমন রোগ-বালাই বিষয়ক আলোচনায় আল্লাহর ফয়সালা বলে মন্তব্য কিন্তু চাকরির সফলতা বিষয়ক আলোচনায় যোগ্যতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট বর্ননা করা। আবার ব্যবসায়িক সফলতার আলোচনায় আল্লাহর ফয়সালা।

প্রাথমিক ভাবে মনে হল এটাও hypocrisy. কিন্তু দ্বিধান্বিত হলাম। সত্যিই কি তাই?

কর্মযজ্ঞ ও প্রাপ্তি: একটু দেরিতে হলেও বসলাম। শুরুতেই বাংলা একাডেমীর 'ইংরেজি-বাংলা' অভিধান নিলাম। সেখানে পেলাম:

Hypocrisy: ভণ্ডামি; কুহনা; কুহনিকা; কপটধর্ম; মোনাফেকি।

এরপর নিলাম বাংলা একাডেমীর 'বাংলা-বাংলা' অভিধান। সংক্ষেপ করার চেষ্টায়, প্রাপ্ত ৫টি বাংলা শব্দের মধ্যে প্রথম ও শেষ’টার অর্থ খুজলাম। ফলাফল এরকম:

ভণ্ডামি: প্রতারণা, ছল, চাতুরী; কপটতা।

মুনাফেকি: মুনাফেকের আচরণ; প্রতারণা, শঠতা। (মুনাফেক: কপট, প্রতারক, ভন্ড।)

মুনাফেক একটি আরবি শব্দ হিসাবে জানি যা অগ্রহনযোগ্য/পরিত্যাজ্য চরিত্রের অধিকারী লোকদের বুঝাতে ব্যবহার করা হয়। বিস্তারিত জানার জন্য দীর্ঘদিন আগে সংগৃহীত ইসলামী পরিভাষা (ড. সৈয়দ শাহ এমরান) ব‌ইটায় খুজলাম। প্রাপ্ত বিস্তারিতের একাংশ এরকম:

মূল অক্ষর نفقا : ن – ف – ق অর্থ মাটিতে গর্ত করা। নাফিক বলতে বোঝায় বন্য ইঁদুর এমন গর্তে প্রবেশ করেছে যার রয়েছে একটি প্রবেশপথ ও একটি বহির্গমন পথ। মুনাফিক লোককে তার দ্বিমুখী স্বভাবের কারণে মুনাফিক বলা হয়- মুসলমানদের সম্মুখে এক প্রকার কথা বলে এবং কাফিরদের সম্মুখে ভিন্নরূপে বলে। পবিত্র কুরআনে আছে: "যখন তারা মু'মিনগণের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, আর যখন তারা নিভৃতে তাদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তোমাদের সঙ্গেই রয়েছি; আমরা শুধু তাদের সাথে ঠাট্টা-তামাশা করে গিয়ে থাকি" (২:১৪)।

এরপর ভাবলাম সংজ্ঞা খুজে দেখি। যেহেতু মূল বিষয়টা ইংরেজি শব্দ, খুজলাম google এ। সেখানে থেকে জানলাম:

According to Oxford Languages it is ‘The practice of claiming to have higher standards or more noble beliefs than is the case.’

Cambridge dictionary defines hypocrisy as ‘a situation in which someone pretends to believe something that they do not really believe, or that is the opposite of what they do or say at another time.’

হঠাৎ মনে পড়ল, প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলস্বরূপ ChatGPT নামে AI (Artificial Intelligence) ভিত্তক নতুন একটা software বাজারে আসছে যেখানে প্রশ্ন করলে তাৎক্ষনিক উত্তর পাওয়া যায়। মাথায় বেজে উঠল “যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই; পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন।“ সেই মত ‘Hypocrisy meaning’ লিখে command দিলাম। উত্তর পেলাম:

‘Hypocrisy refers to the behavior of individuals or groups who profess certain beliefs, values, or principles publicly but act in a manner that contradicts or goes against those professed ideals in their private actions or actual behavior. It involves a discrepancy between what someone claims to believe or stand for and how they actually behave. In essence, hypocrisy is characterized by a lack of consistency between words and actions, often manifesting as a form of insincerity or double standards.’

শেষের কথা (শিক্ষা): মোটের উপরে বুঝলাম যা জানতাম তাই ঠিক। তবে লাভ হল এই যে একটা পর্যালোচনা হয়ে গেল। যা হোক, যা বুঝলাম তার সা সারমর্ম এরকম “কোন কিছু তার প্রকৃত অবস্থা থেকে বাড়িয়ে/ভিন্নভাবে উপস্থাপন করাটাই হল hypocrisy. অন্য কথায় বলা যায় - মনে এক আর কথায়/কাজে আরেক।” শব্দটার ব্যাপ্তি অনেক বিস্তৃত, যার ফলে বাংলায় অনেকগুলো সমার্থক শব্দ চলে আসছে। সেদিক থেকে আরবি শব্দ ‘মুনাফেকি’ নির্দিষ্ট করে মহান আল্লাহ’র বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত।

পরিশেষ (উপলব্ধি): আমি উলক্ষের লেখক। মানসিক উৎকর্ষের জন্য লিখি বলে একাধারে লিখতে পারিনা। লেখা হয় খন্ডকালীন ও সময় সাপেক্ষ। তার বিভিন্ন উপকারীতা পাই। যেমন এইটা লেখাকালীন সময়ে একদিন এক বন্ধুর সাথে আলাপের সারমর্ম ছিল এমন: তোর কাছে আসল কথাটা বললাম। অন্য কেউ হলে এত কথা বলতাম না। একটা কিছু বলে কাটিয়ে দিতাম।

এই যে এক‌ই বিষয় ভিন্ন মানুষের কাছে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করা, এটা এক প্রকার hypocrisy কি না? চিন্তা করে মনে হল, হ্যাঁ।

প্রশ্ন জাগল, এর উৎস নিয়ে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থাই তো আমাদের শিখায় সম্পর্ক বিচার করে কথা বলা, বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে এক‌ই বিষয়ে ভিন্ন জনের কাছে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করা, পরিনতি ভেবে মতামত/সিদ্ধান্ত দেয়া ইত্যাদি। এইসব করতে গেলে তো আর ‘সদা সত্য কথা বলা’ সম্ভব না। তবে কি আমরা সকলেই স্থান, কাল, পাত্র ভেদে (কোন না কোন পর্যায়ে) hypocrisy করি…? দু:খজনকভাবে এক্ষেত্রেও আমার উত্তর ‘হ্যাঁ’…!!!

বিষয়টা নিয়ে আর‌ও ভাববার ও আলোচনার প্রয়োজন অনুভব করছি…


19 March 2018

স্বপ্নবিলাসী নারী, উচ্চাভিলাষী পুরুষ, বিধ্বস্ত সমাজ...

নিন্ম-মধ্য আয়ের এই দেশে প্রায় প্রতিটি পরিবারই (গুটি কয়েক উচ্চ বিত্ত পরিবারের কথা ব্যতিক্রম ধরে) কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে এগিয়ে চলে এখানে যেমন অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা আছে, তেমন আছে সামাজিক সীমাবদ্ধতা পরিবার সমাজের দায়িত্ব যেখানে নির্বিঘ্নে এগিয়ে চলার পথ তৈরি করে দেয়া, সেখানে উল্টো সীমারেখা টেনে দেয়। সেই সাথে কখনও কখনও যোগ হয় ধর্মের নামে আরও কিছু - গোড়ামী এখানেই শেষ হয় না বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষিতদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা যে সমাজে আমরা বাস করি তার বিশ্বাস নৈতিকতা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে, যা সীমাবদ্ধতার আরও একটি মাত্রা তৈরি করে নারী পুরুষের (ছেলে-মেয়ে) সকলের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একই রকম হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় যা এই লেখার প্রতিপাদ্য

আমাদের সমাজে একটি মেয়ে জন্মের পর থেকেই (মতান্তরে কৈশোর থেকে) একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে বেড়ে উঠে বাস্তবিক অর্থে আমাদের সমাজ কখনও নারী স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারেনি প্রতিটি মেয়েই তাই বুদ্ধি-বিবেকের বিকাশের (কৈশোর থেকেই) পর থেকেই অপূর্ন ইচ্ছাগুলো ভবিষ্যতে পূরণের স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হয় তার সকল স্বপ্ন পূরণের মূল ভরসা হয় তার ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গী, তথা স্বামী আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্য অভিবাকরাও (পিতা-মাতা) একইভাবে চিন্তা করে, আশা করে একটি ভালো ছেলের সাথে তাদের মেয়ের বিয়ে দিবে। এবং সে তাদের মেয়েকে সুখী করার (তথা স্বপ্ন পুরণের) যাবতীয় দায়িত্ব নিয়ে সাধ্যমত পূরণ করবে। সেই কল্পিত ভালো ছেলের গ্রহণযোগ্যতা তৈরির আশায় তারা তাদের মেয়েকে সকল প্রকার সমালোচনা মুক্ত রাখতে সর্বাত্তক চেষ্টা করেন প্রকারন্তরে সীমাবদ্ধতা আরও বৃুদ্ধি পায়, পরাধীনতার শৃংখলটি আরও মজবুত হয়। এভাবেই একটি মেয়ের এক/দেড় যুগ কাটে ইচ্ছা এবং চাওয়াগুলকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখার যুদ্ধে। আর একটি দিনের আশায়, যেদিন তার স্বপ্ন গুলো ডানা মেলে উড়তে শুরু করবে। এই সময়ের মধ্যেই সে জেনে যায় এই শৃঙ্খল থেকে মুক্তির সৌভাগ্য সবার হয় না। এবং অপেক্ষা শেষের সন্ধিক্ষণে এসে সে জানতে পারে তার স্বাপ্নের যোগবিয়োগ অত্যাবশ্যকীয়, এবং বেশিরভাগই অনিশ্চিৎ চিন্তায় মননে পরনির্ভর্শীলতায় তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ গোছানোর কাজে অসচেতন হয়ে পড়ে এবং একসময় হঠাৎ আবিষ্কার করে নিজের পায়ে দাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় রসদ সে সংগ্রহ করতে ভূলে গেছে  এই অনিশ্চিৎ পরিস্থিতি মানসিক চাপে পরিণত হয়, কখনও কখনও হতাশায়/হীনমন্যতায় রুপান্তরিত হয়।

ছেলেদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু ভিন্নরকম ছেলেরা ছোট থেকেই তুলনামূলক বেশী স্বাধীনতা ভোগ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের সীমারেখা নির্ধারিত হয় পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি দ্বারা যা কর্মজীবনে প্রবেশ করার মাধ্যমে পুনর্ঘটিত হয় বেড়ে উঠার সময়টাতে সে জানতে পারে তার ইচ্ছাপূরণের সর্বোত্তম উপায় হল নিজের পায়ে দাড়ানো এবং সেই আশায় ভবিষ্যতের জন্য জমা রাখা এছাড়াও, ভবিষ্যতের কাণ্ডারি হিসেবে তাকে প্রস্তুতি নিতে হবে যার লক্ষ পরিবার সমাজ উভয় দিক থেকে বর্তমাকে ছাড়িয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন সেখানে শুধু নিজের গুলোই না, তার উপর নির্ভরশীল আরও অনেকের ইচ্ছাপূরনের দায়িত্বও তার সর্বসাকুল্ল্যে নিজের ইচ্ছা পূরণ, ভবিষ্যতের দায়গ্রহন এবং পুর্ব প্রজন্মকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ নিয়ে সম্ভাব্য সব অর্জনের জন্য একসময় পথচলা শুরু করে। এই প্রস্তুতির নানা পর্যায়ে তার অগ্রগতি পরিমাপ করে তার ব্যর্থতার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয় যার পুরটা দায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাকে নিতে হয়। এভাবে একটি ছেলে তার বেড়ে ওঠার সময়টাতে ভবিষ্যতের যে ছবি আকে তা দীর্ঘ পথের পরিক্রমায় বাস্তবতার দহনে অনেকটাই নতুন চেহারা পায়, স্বপ্ন থেকে আকাঙ্ক্ষায় রুপ নেয়, যার সিমানা হয় তার কল্পনার সর্বোচ্চ সীমা, কখনও কখনও কল্পনাকেও ছাড়িয়ে

সময়ের পথ পরিক্রমায় জীবনকে উপভোগ করার সন্ধিক্ষনে উপস্থিত হয়ে তাদের পরিচয় ঘটে কঠোর বাস্তবতার সাথে যেখানে তাদের আশা পূরণ অনেকটাই দঃস্বাধ্য। ভাবনা বাস্তবতার সাথে বিস্তর পার্থক্য আবিস্কার করে, যার প্রথমটি শুরু হয় কর্মজীবনে প্রবেশের সময় নিজেকে গুছানের জন্য যে সুযোগ একটি ছেলের প্রয়োজন সমাজ তা দিতে ব্যর্থ আর যে যোগ্যতা সে অর্জন করেছে তা অপ্রতুল প্রতিপন্ন হয়, কখনও প্রয়োজনের বিচারে কখনও তুলনামূলক বিচারে। এবং অবস্থা শুধু তার একার জন্যই না, তার মত আরও অনেকের কিন্তু এখানে তারা সহযোদ্ধা নয় প্রতিদ্বন্দী। কেননা তাদেরর এগিয়ে যাওয়ার বাসনা পূরণ করার জন্য যে পথের প্রয়োজন তা সমাজ তৈরি করতে ব্যর্থ। যেটুকু সুযোগ সমাজ তৈরি করতে পেরেছে তাতে হয়ত অল্পকয়েকজনের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব ফলাফল যুদ্ধ। যুদ্ধে অবস্থান সংহত হতে না হতেই ছেলেদের নিতে হয় নতুন দায়িত্ব। যদিও পরিবার ভাবে সহযোদ্ধা ব্যবস্থা হিসেবে, ছেলেদের জন্য হয়ে ওঠে আরেকটি স্বপ্ন পূরনের দায়িত্ব। নিজেকে নিয়ে খাবি খেতে থাকা একটি ছেলে পায় ব্যর্থতার আরেকটি অনুভূতি আর মেয়ে পায় স্বপ্ন ভঙ্গের এভাবেই ব্যর্থতা আর স্বপ্ন ভঙ্গের অনুভুতি নিয়ে তারা আরও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। ব্যাক্তি থেকে পরিবার হয়ে তা সমাজে প্রভাব ফেলতে শুরু করে যা সময়ের পরিক্রমায় সমাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে দেখা দেয়।

এতকিছুর মধ্যেও আমরা প্রত্যেকে সুন্দর আগামীর জন্য পথ চলতে থাকি কেননা আমরা বিশ্বাস করি সংসার সাগর সুখ-দু:খের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা