১লা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ। এবং বাঙালি জাতির জন্য একটি উৎসব ও আনন্দের দিন। গণমাধ্যমের ও সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এ দিবসটি
পালনের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে এবং এটিকে আমরা একটি সর্বজনীন অনুষ্ঠান হিসেবে
বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। তবে, আমার প্রশ্ন সত্যিই কি এটা সর্বজনীন, নাকি আমরা কিছু মানুষ উৎসব এ অংশীদার
হয়ে একে সর্বজনীন বলে প্রচার করতে শুরু করে দিয়েছি?
আমি বাক্তিগতভাবে
দিন-ক্ষণ হিসাব করে উৎসব করার পক্ষের লোক নই। আমার কাছে আমার পরিবার ও আমার কাছের কিছু মানুষের সাফল্য
বা সুখবরই উৎসবের উপলক্ষ। সামাজিক জীবনে
কিছু উপলক্ষ অবশ্যই থাকবে যেখানে সবাই সম্মিলিত ভাবে আনন্দ করবে। এবং এসব উৎসবে যত বেশি মানুষের অংশগ্রহন
হবে ততই তার আনন্দ ও তাৎপর্য বাড়বে। এবার আমার প্রশ্নের কারন ও তার উত্তরের বিষয়ে আসি। এবার ১লা বৈশাখে সকালের খাবার এর পর বাড়ি
থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাটতে হাটতে হঠাৎ লক্ষ করলাম হোটেল ও চায়ের দোকানে ভিড় নেহায়াত
কম না। তৎক্ষণাৎ মনে হল আজ না সর্বজনীন উৎসব? লোকজন সকালের নাস্তা হোটেলে খাচ্ছে কেন,
চায়ের দোকানে বসে আছে কেন?
নিজের কাছে উত্তর
খুঁজতে গিয়ে মনে হল এটা আসলে সর্বজনীন উৎসব না। কেননা ধর্ম-বর্ণ এর শিকল ছিঁড়তে পারলেও দারিদ্রতার শিকল এখনও ছিঁড়তে
পারে নাই। যে দেশে প্রায় ৩০ ভাগ মানুষ এখনও দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে
সেই দেশে সকলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হলে যা খুব গুরুত্বপূর্ণ তা হল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা।
বিশেষত অর্থ ও সময় বিষয়ক। আমরা জানি সরকার এরই মধ্যে উৎসব ভাতা প্রচলন করেছে। যা
এই দিনটাকে উৎসব হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে অন্যান্য উৎসব ভাতার চেয়ে এর পরিমান
অনেক কম এবং এই উৎসব ভাতা সকলের পায় না। আর মাত্র ১দিন ছুটি হাওয়াতে কর্মজীবী মানুষের একটি বড় অংশের পক্ষেও এই উৎসব
পালন সম্ভব হয় না, বিশেষত পেশার কারনে যারা পরিবার থেকে দূরে থাকেন। এছাড়াও সকলের অংশগ্রহন
নিশ্চিত করতে হলে যেই ভালবাসা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হয় তা এখনও ১লা বৈশাখ অর্জন করতে
পারে নাই বলে মনে হয়। এর জন্য হয়ত আরও কিছু সময় প্রয়োজন।
শেষ করার আগে
অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে ইতোমধ্যে বাংলা নববর্ষ একটা বড় অংশের মানুষের মনের
মধ্যে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে এবং সেদিন হয়ত বেশি দূরে নয় যেদিন এটি দেশের সকল
মানুষের কাছেই উৎসবের উপলক্ষ হিসাবে বিবেচিত হবে।